Monday, August 16, 2010

ঐ পারে থুতুগুলি এই পার টলমল


ছাড়া ছাড়া মেঘ অস্থির হয়ে উঠছে। পানশালায় কচ্ছপের মত উড়ে বেড়াচ্ছে ধোঁয়া। সামনে বিয়ারের খালি বোতল রেখে আমরা বন্ধুরা থুতু ফেলা প্রাকটিশ করছি, অনেক থুতু দিতে হবে চারপাশে। অনেক অনেক থুতু। পিককে তখন একে একে ঢুকছেন কবিরা, পিয়াসিতে গল্পকাররা, আরো এদিক-ওদিক টুকরো টাকরা প্রাবন্ধিক- ব্লগার কতিপয়। আমরা পিচকারির মত থুতু দিতে থাকি, যেন কোন ধর্মগ্রন্থের তর্জমা, শত-সহস্র-লক্ষ- অজুত-নিজুত ধারায় বইছে ভুবনে।

আমরা ক্লাব করলাম সভা সমিতি, ঠিক করলাম কবিদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে, দু-একপাত্র গল্পকার, আধ ফুট হিংস্র ব্লগার সব; এত থুতু কোথায় যে রাখি! নদীগুলি সব আমাদের ছিল, পদ্মা যমুনা মধুমতী। আমাদের শরীরে পুরানো সব গাছ শক্ত ও আশ্রয়, কত শত শত কাক দেখিছি আমি ভোররাতে উড়ে যাতে যাতে বলে গেছে তারা, তৈরি থেকো আর কবিদের বিশ্বাস করো না কখনও। তৈরি হয়ে বসে আছি সারাদিন, সারা শরীর জুড়ে থুতু আর পেছনে ক্ষমার অধিক রক্তাক্ত আকাশ। কোন কবি না এলে আমি আর কী করতে পারি?

আমাদের জানা ছিল না, নদীর অন্য পাড়গুলিতে কবি-গল্পকারেরা শুকিয়ে গুটিয়ে এট্টুস হয়ে পড়ছিলেন, চাইছিলেন মাটিতে মিশে যেতে। কিন্তু মাটি তাদের নেবে কেন? কোথা থেকে অদৃশ্য কিছু হাত এসে তাদের ফেলে দিল জলে, তারা টলমল টলমল পদ্ম-শাপলার মত। আমরা খবর পেয়ে পাড়ে এসে জড়ো হলাম। স্লোগান, উত্তেজনা ও লাইভ টেলিকাস্টের শেষে সার সার পাড়ে দাঁড়িয়ে প্রাণপণে থুতু ছুড়তেই থাকলাম। ধীরে ধীরে আঁধার নেমে এল। আমরা বাড়ি গিয়ে খচাখচ অনলাইন পিটিশন বানালাম। পিডিএফ ও ফরোয়ার্ড, ফরোয়ার্ড। এবং চুপি চুপি তাদের বাঁচিয়ে রাখলাম, এত ঘৃণা ও থুতু কোথায় যে রাখি।

কবিরা পানির ভেতর চুপসে ছিল ভিজে বেড়ালের মত, গজগজ করছিল সেই দিগ্গজেরা, যেন পারলেই লিখে ফেলবে দু-তিনটা নিউজ পেপার আর দেখছিল নৌকার আসা যাওয়া, মাছেদের খেলা। কখনও চড়া রোদে কখনও ধুম বৃষ্টিতে তারা ডুবছিল ভাসছিল আর প্র্যাকটিশ করছিল নিজেদের মধ্যে থুতু ছোঁড়াছুড়ি। ঘৃনা তাদেরও ছিল, ক্রোধ ও দু-এক ছটাক থুতু। তবে তা কেবল নিজেদের জন্য, আত্মঘাতী, কাক ও পলের উপমা তখন দ্রবীভূত। আর নদীর অন্যপারে তখন মেলা, সাজগোজ রঙিন পোশাক খাবার-দাবার চ্যাট ও অনন্তসজ্জায় বিয়ারের বোতলগুলি, বিধিসন্মত।